বাংলাদেশের লালমনিরহাট জেলায় ৬৯ হিজরি সনে নির্মিত একটি মসজিদের সন্ধান পাওয়া গেছে। মসজিদটির কেবল ধ্বংসাবশেষ অবশিষ্ট থাকায় এটি স্থানীয়ভাবে হারানো মসজিদ নামে পরিচিত। এই মসজিদটিকে বাংলাদেশের তথা দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে পুরনো মসজিদ বলে ধারণা করা হয়।
সুপ্রাচীন এই মসজিদটি রংপুর-কুড়িগ্রাম মহাসড়কের ১ কিলোমিটার দক্ষিণে লালমনিরহাট সদর উপজেলার পঞ্চগ্রাম ইউনিয়নের রামদাস মৌজায় অবস্থিত।
লালমনিরহাটের পঞ্চগ্রাম ইউনয়নের রামদাস মৌজায় বহুদিন ধরে একটি পতিত জঙ্গল ছিল। জঙ্গলের নাম ছিল মজদের আড়া। স্থানীয় ভাষায় আড়া শব্দের মানে জঙ্গলময় স্থান। জঙ্গল পরিষ্কার করার সময় প্রাচীনকালের কিছু ইট বেরিয়ে আসে। এমনিভাবে মাটি ও ইট সরাতে গিয়ে একটি মসজিদের ভিত খুঁজে পাওয়া যায়। এখানের একটি প্রচিীন শিলালিপির পাঠ থেকে মসজিদের প্রতিষ্ঠাকাল ৬৯ হিজরি জানা গেছে।
মসজিদের ধ্বংসস্তূপের ভিতরে ৬’’×৬’’×২’’ আকারের একটি শিলালিপি পাওয়া যায়। লিপিটিতে আরবি ভাষায় ষ্পষ্টাক্ষরে লেখা আছে “লা-ইলাহা-ইল্লাল্লাহু মুহাম্মদুর রাসুলুল্লাহ, হিজরি সন ৬৯”। লিপিটি থেকে বোঝা যায় যে মসজিদটি প্রায় ৬৯০ খ্রিস্টাব্দের দিকে নির্মিত হয়েছিল। শিলালিপিটি বর্তমানে রংপুরের তাজহাট জাদুঘরে সংরক্ষিত আছে।
১৯৮৭ সালের প্রথমভাগে স্থানীয়রা সাংবাদিক ও গবেষকদের কাছে হারানো মসজিদ সম্পর্কে অবহিত করেন। তখন শতাধিক গবেষক, প্রত্নতাত্ত্বিক ও ইতিহাসবিদ এখানে গবেষণা করতে ছুটে আসেন।
টাইগার ট্যুরিজম প্রতিষ্ঠানের উপদেষ্টা টিম স্টিল লালমনিরহাটের মসজিদটি নিয়ে ব্যাপক গবেষণা করেছেন। প্রথাগত ইতিহাস অনুযায়ী ১০০০ শতকে চট্টগ্রাম অঞ্চলে সুফিদের প্রথম আগমন ঘটে। ১১০০ থেকে ১২০০ শতকে সুফিদের মাধ্যমে পূর্ববাংলায় ইসলামের প্রচার ও প্রসার শুরু হয় এবং তাঁদের হাতেই এই অঞ্চলে প্রথম মসজিদ নির্মাণ হয়। তাই এত আগে এখানে মসজিদ নির্মাণের বিষয়টি আশ্চর্যজনক। টিম স্টিল তখন আমেরিকান ইনস্টিটিউট অফ আর্কিওলজিস্ট প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। সেখানকার ইসলামের ইতিহাস সংক্রান্ত গবেষকগণ বলেন অনেক রোমান ও জার্মান ইতিহাসবিদের লেখায় আরব ও রোমান বণিকদের ব্রহ্মপুত্র অববাহিকায় নৌ-বাণিজ্যের সূত্রে আসা-যাওয়ার কথা জানা যায়। এছাড়া বেশ কয়েকটি চলমান গবেষণায় ব্রহ্মপুত্র-তিস্তা অববাহিকাকে পৃথিবীর সবচেয়ে পুরোনো আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের নৌপথ হিসেবে ব্যবহৃত হওয়ার প্রমাণও পাওয়া গেছে। টিম স্টিল পঞ্চগড়ের ভিটাগড়ে প্রাচীন নগরের নিদর্শন পাওয়া প্রত্নতাত্ত্বিক অধ্যাপক শাহনেওয়াজের গবেষণা থেকেও সহায়তা পান। তিনি মনে করেন মসজিদটি নির্মাণের ইতিহাস খুঁজে পেলে হয়তো বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের ইতিহাসের সঙ্গে বিশ্ব সভ্যতার সম্পর্কের আরেক ইতিহাস জানার পথ উন্মোচিত হবে।
মসজিদটি ২১ ফুট চওড়া এবং ১০ ফুট লম্বা ছিল। এর চারটি স্তম্ভ ছিল, যার দুটি সম্পূর্ণ ধ্বংসপ্রাপ্ত।
Exclusive video : “বাংলাদেশে পাওয়া প্রাচীন মসজিদের অবশিষ্টাংশ“। Al Jazeera।
Source – Wikipedia